মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৪

"অপ্রকাশিত ভালোবাসা" --- A SAD LOVE STORY

কোন এক বসন্তের প্রাণবন্ত সকাল। অনির্দিষ্টের মতো ছেলেটা একটা শপিং কমপ্লেক্সের ভিতর এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি করতে থাকে। একসময় তার চোখ পড়ে যায় একটা CD-স্টোরের কাউন্টারে দাঁড়ানো খুব সুন্দর একটা মেয়ের দিকে। মেয়ের হাসিটা ছিল অপূর্ব রকমের সুন্দর , ছেলেটা প্রথম দেখায় মেয়েটার প্রেমে পড়ে যায়। এটাই মনে হয়, Love At First Sight.

ছেলেটা সামনে এগিয়ে একটা CD নিয়ে মেয়েটার দিকে বাড়িয়ে দেয়।

ছেলেটা: "আমি এই CD-টা কিনতে চাচ্ছিলাম।"
মেয়েটা: (হাসিমুখে) "তুমি চাইলে আমি এটা তোমার জন্য সুন্দর দেখে একটা প্যাকেটে Wrapping করে দিতে পারি।"
ছেলেটা মাথা নিচু করে সম্মতি জানায়। 

মেয়েটা কিছুক্ষনের মধ্যে শপ-এর ভিতর থেকে CD-টা Wrapping করে নিয়ে আসে। ছেলেটা CD-টা নিয়ে বাসায় চলে যায়। এরপর থেকে ছেলেটা প্রতিদিন CD-শপে এসে একটা করে CD কিনতে থাকে। মেয়েটা আগের মতোই তা Wrapping করে দেয়। ছেলেটা Wrapping করা CD নিয়ে গিয়ে বাসায় তার সেল্ফ-এ রেখে দেয়। ছেলেটা অনেক চেষ্টা করে মেয়েটাকে তার ভালোলাগার কথা বলার, কিন্তু তা বলতে পারে না। ছেলেটার মা একসময় বিষয়টা জানতে পারে। তখন তিনি তার ছেলেকে পরামর্শ দেন সাহস করে মুখ ফুটে একবার কথাটা বলে দেখতে। 

পরদিন ছেলেটা আবার CD-শপে যায়। প্রতিদিনের মতো সে আজও একটা CD কেনে। ছেলেটা ভালোলাগার কথা বলার চেষ্টা করে এবং আজও ব্যর্থ হয়। মেয়েটা CD-টা Wrapping করার জন্য ভিতরে চলে যায়। এমন সময় ছেলেটার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলা করে। সে সাথে সাথে একটা কাগজের মধ্যে লিখে, "কেন জানি তোমাকে আমার অসম্ভব রকমের ভালো লেগে গেছে। আমরা কি আগামি পরশুদিন বিকালে কফিশপে দেখা করতে পারি।" লেখাটার নিচে সে তার নাম ও ফোন নাম্বার লিখে রাখে। এরপর কাগজটা মেয়েটার ডেস্কের উপর রেখে ছেলেটা দৌড়ে চলে যায় CD-শপ থেকে।

[গল্পের এই পর্যায়ে এসে ছেলেটার আর মেয়েটার নামকরণ করা যাক। ধরা যাক ছেলেটার নাম 'জন' আর মেয়েটার নাম 'মারিয়া'।]


পরশুদিন বিকাল। এক ঘন্টা ধরে মেয়েটা কফিশপে অপেক্ষা করছে ছেলেটার জন্য। ছেলেটার অনুপস্থিতি দেখে একসময় মেয়েটা ডায়াল করে ছেলেটার ফোন নাম্বারে। ছেলেটার মা ফোন রিসিভ করে। 

- "হ্যালো"
-- "জন আছে? ওকে একটু দেওয়া যাবে?"
- "কে বলছো তুমি?"
-- "আমি মারিয়া"
- "মারিয়া, তুমি কি জান না 'জন' গতকাল রোড অ্যাক্সিডেন্টে ........."

ছেলেটার মা আর কথা কমপ্লিট করতে পারেন না, তার দুইচোখ বেয়ে কান্না চলে আসে। তিনি ধীরে ধীরে তার মৃত ছেলের রুমে যান। একসময় তার চোখ পড়ে যায় ছেলেটার সেল্ফ-এর উপর সাজিয়ে রাখা অসংখ্য Wrapping করা CD-এর উপর। তিনি অবাক হয়ে দেখেন যে একটা CD-ও Wrapping করা অবস্থা থেকে খোলা হয়নি।

তিনি একটা CD হাতে নিয়ে Unwrapped করেন। CD-এর ভিতর একটা কাগজ খুঁজে পান তিনি। তাতে লেখা আছে, "কেন জানি তোমাকে আমার অসম্ভব রকমের ভালো লেগে গেছে। আমরা কি কোন একদিন বিকালে কফিশপে দেখা করতে পারি - 'মারিয়া'।"

সাথে সাথে তিনি আর একটা CD হাতে নিয়ে Unwrapped করেন। আবার এই CD-এর ভিতরেও তিনি আর একটা কাগজ খুঁজে পান। তাতে লেখা আছে, "কেন জানি তোমাকে আমার অসম্ভব রকমের ভালো লেগে গেছে। আমরা কি কোন একদিন বিকালে কফিশপে দেখা করতে পারি - 'মারিয়া'।"

ছোটগল্প : বর্ষাফুল

lf thou showest me not thy face
lf thou leavest me wholly aside
I know not how I am to pass
These long rainy hours.
– Rabindranath Tagore
সকাল বেলা ঘুম থেকে থেকে জেগেই মিতুর মনটা খারাপ হয়ে গেলো। সেই সাথে মেজাজও চড়ে গেলো হাই ভোল্টে। এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকলো জহির। মিতুর ফুফাতো ভাই।
হাঁপাতে হাঁপাতে বললো, মিতু, একটা আলপিন দে তো!
মিতু কড়া করে বকা দিতে গিয়েও থেমে গেলো। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের ঘরে যে ছেলে হুট হাট করে ঢুকে যায় তার মতো কাণ্ডজ্ঞানহীন ছেলেকে বকা দেয়া, না-দেয়া এক কথা।
কি হলো মিতু! বললাম না একটা আলপিন দিতে?
আমার কাছে আলপিন নেই। অত্যন্ত নিচু স্বরে বললো মিতু।
আকাশ থেকে পড়লো জহির। এমন আচানক কথা সে জীবনেও শুনেনি। তার কোনো কিছুর প্রয়োজন হলেই সে মিতুর কাছে দৌড়ে আসে। আজ পর্যন্ত সে না শব্দটি মিতুর কাছে শুনেনি। তাই এখন সে কি করবে বুঝতে পারলো না। খানিক দাঁড়িয়ে থেকে জহির রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
মিতুর মনটা আরও খারাপ হয়ে গেলো। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে মনে হয় দুপুর পেরিয়ে গেলেও এই বৃষ্টি থামবে না। অথচ দশটার সময় জর্জের সাথে দেখা করার কথা। মিতুকে জর্জ ভালোবাসে।
জানালা খুলে দিতেই এক পশলা ঠাণ্ডা বাতাস মিতুর রেশমি চুলগুলো এলোমেলো করে দিলো।
এখন বৃষ্টি একটু কম।
ছোট্ট একটি ছেলেকে দেখলো মিতু, যে অনেকগুলো কদম ফুল নিয়ে যাচ্ছে।
মিতু ক্যালেন্ডার উল্টিয়ে দেখলো আজ আষাঢ় মাসের প্রথম দিন। অর্থাৎ বর্ষার প্রথম দিন।
হঠাৎ করেই মিতুর মনটা আশ্চর্যরকম ভালো হয়ে গেলো। মেজাজও ফুরফুরে হয়ে গেলো নিমিষে।
মিতু অনেক খুঁজে একটা আলপিন বের করলো।
জহিরের রুমে গিয়ে দেখলো, জহির একটা টিকটিকিকে খুব মনোযোগসহকারে দেখছে।
এই নে, আলপিন। হঠাৎ মিতুর কণ্ঠ শুনে জহির লাফিয়ে উঠলো। আলপিন হাতে দাঁড়িয়ে আছে মিতু।
আলপিন হাতে নিয়ে খুব কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে মিতুর দিকে তাকিয়ে রইলো জহির। তোকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ দিতে হবে না। আলপিন দিয়ে কী করবি সেটা বল, চলে যাই শুনে। হাতে সময় নেই।
মিতুর কথা শুনে রহস্যজনকভাবে হাসতে লাগলো জহির।
বলা যাবে না তোকে।
এমনভাবে কথাটা বললো জহির, যেনো আলপিন দিয়ে কী করবে এটা না-বলা খুব মজার একটা ব্যাপার।
মিতু রাগতে গিয়েও দমে গেলো। আজ কারও সাথে রাগবে না মিতু। খারাপ ব্যবহারও করবে না।
সে জহিরের ঘর থেকে বের হয়ে গেলো। আটটা বেজে গেছে। দশটার মধ্যে টিএসসিতে যেতে হবে। দুপুরের পরে কাস আছে। কাসের আগেই জর্জের সাথে দেখা করতে হবে।
এক.
মিতু বাসা থেকে বেরিয়েই একগুচ্ছ তরতাজা কদম ফুল কিনলো। এই বর্ষার প্রথম কদম ফুল জর্জকে দেবে।


দুই.
মিতু অনেকণ যাবৎ অপো করছে অথচ জর্জের পাত্তা নেই। জর্জ এরকম কখনোই করে না। প্রথমে মিতুর খুব রাগ হলো। শেষে ভয় পেয়ে গেলাÑ জর্জের অসুখ করেনি তো! মিতু বিরক্ত হয়ে ঘড়ির দিকে তাকালো।
আর তখুনি দেখলো জর্জ সিএনজি থেকে নামছে। আর তার হাত ধরে নামছে তাদের ডিপার্টমেন্টের মেয়ে শ্রেয়া।
মিতুর দিকে তাকিয়েই চোখ ফিরিয়ে নিলো জর্জ।
আর শ্রেয়া মিতুর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি হাসলো। তারপর ডিপার্টমেন্টের দিকে চলে গেলো।
মিতু রাগে অভিমানে কেঁদে ফেলছিলো প্রায়। কিন্তু নিজেকে সামলে নিলো।
হাতের ফুলগুলো ড্রেনে ছুঁড়তে যাচ্ছিলো। তখুনি দেখলো ওর ফুফাতো ভাই জহির হন্ত-দন্ত হয়ে তার দিকে আসছে। মিতু ফুলগুলো ফেললো না।
মিতু! তুই আমাকে না নিয়ে চলে এলি যে? জহিরের গলায় অভিমানের সুর।
তোকে নিয়ে আসতে হবে নাকি? তুই একা আসতে পারিস না? গাধা কোথাকার!
মিতুর এমন আচরণে জহির চুপসে গেলো। সে চুপ করে বসে পড়লো ঘাসের উপর।
কাসে যাবি না? মিতু জানতে চাইলো। তার মুখ রাগে থমথম করছে।
না, তুই যা। আমি নিজে নিজেই যেতে পারবো। স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলো জহির।
মনে শত যন্ত্রণা থাকা সত্ত্বেও মিতুর ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠলো।
খবরদার! এখানে স্ট্যাচুর মতো বসে থাকবি না। মিতু জহিরকে শাসলো। নে, আমর হাত ধরে উঠে আয়।
মিতুর দিকে তাকিয়ে অল্প হাসলো জহির। তারপর মিতুর হাত ধরে উঠে কাসের দিকে এগুলো দুজন।
ফুল আমার জন্যে এনেছিস্ মিতু?
জহিরের এমন কথায় থতমত খেলো মিতু। কিন্তু পরণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, হুঁ। এই ধর।
মিতু, তুই কি জানিস আজ বর্ষার প্রথম দিন?
মিতু হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো।
বর্ষার প্রথম কদম ফুল ভালোবাসার মানুষকে দেয়, তা জানিস?
মিতু এবারও মাথা নাড়লো।
তুই তো আমায় ভালোবাসিস না, মিতু।
কিন্তু তুই তো বাসিস?
জহির হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো।
তাহলেই চলবে। বলতে বলতে মিতুর চোখে পানি এসে গেলো।
তার মনে হলো, জহিরকে সে অনেক অনেক ভালোবাসে। যা জর্জের সাথে ছিলো কৃত্রিমতায় ভরা। মিতু জহিরের হাতটা চেপে ধরলো।

সোমবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৪

শীত শীত সময়ে..

হেমন্তের এই সময়টায় শুরু হয় শীতের প্রস্তুতির তোড়জোড়। শীতের পুরোনো পোশাকগুলোই আবার নামিয়ে, রোদে দিয়ে শীত মোকাবিলার আয়োজন। শীত তো থাকবে মোটে দুই মাস, কিংবা আরও কম। নতুন কাপড় কিনেই বা কী হবে। শীতের সময়টা বরং ওজন কমানোতে মন দেওয়া যাক, যাতে গরম এলে পরা যায় নানা ফ্যাশনেবল পোশাক। নাহ্, এই ভাবনায় আর থাকা যাচ্ছে না। অন্তত রঙেঢঙে দারুণ সব শীতের পোশাক দেখলে তো আর তা মনেই আসবে না। এ দেশে শীত পড়ে কম, তাই বলে শীত–পোশাকের বাহারে কমতি নেই। কম ঠান্ডায় পরার উপযোগী করেই বানানো হচ্ছে এ সময়ের শীতের পোশাক। আর ট্রেন্ডও বদলে যাচ্ছে বছর বছর। 
ব্রিটিশ রাজবধূ কেট মিডলটনের দারুণ সব জ্যাকেট আর ওভারকোট তো রোজই দেখা হচ্ছে নানা ওয়েবসাইটে। সেসব কী আর এ দেশে পরা যাবে! এই আফসোস আর করতে হবে না। কারণ, এবার শীতে ফ্যাব্রিক বা কাপড়ের নানা বৈচিত্র্য দেখা যাবে, এমন জানালেন ডিজাইনাররা। নানা নকশার ‘আউটার উইয়ার’ অর্থাৎ অন্য পোশাকের ওপর পরার মতো আরেকটি পোশাক যেমন: কোট, জ্যাকেট, ব্লেজার, সোয়েটার ইত্যাদি বাজারে আসা শুরু হয়েছে এর মধ্যেই। পশ্চিমা ট্রেন্ড মেনেই নকশা করা হচ্ছে এসবের, তবে কাপড়টা এ দেশের আবহাওয়া উপযোগী। যেমন উল বা ফ্লিস নয় বরং সুতি ও অ্যাক্রিলিক মিশ্রণে সোয়েটার বানিয়েছে একস্ট্যাসি, জানালেন তাদের প্রধান পরিচলন কর্মকর্তা (সিইও) তানজীম হক। ‘মেয়েদের জন্য রাউন্ডনেক, টার্টলনেক সোয়েটার থাকছে। আর কিছুদিন পরে পাওয়া যাবে নানা রকম পনচো আর শ্রাগ।’ বললেন তিনি। এর পাশাপাশি অনেকে দেশের বাইরে কিনে নিয়ে যান শীতের পোশাক। তাঁদের জন্য গরম কোট, ভারী কাপড়ের জ্যাকেট ইত্যাদিও আছে।
হালকা ধাঁচের এসব শীতের পোশাকের মজাটা হলো, এতে ভেতরের পোশাকটিও তেমন ঢাকা পড়ছে না। অর্থাৎ সামনের অংশে খোলা কোনো সোয়েটার পরলে ভেতরে পছন্দের টি-শার্টটিও পরতে পারেন। প্রিয় টি-শার্ট বা টপগুলো গরমের জন্য তুলে রাখার তেমন প্রয়োজন নেই। ব্লেজার আর শ্রাগেরও বেলাতেও তাই। সামনের অংশে বোতাম দেওয়া শীতের পোশাক এখন কমই দেখা যাচ্ছে। সোয়েটারের গলাও বেশ বড় চলছে। 

অ্যাসিমেট্রিক বা অসমান কাটের সোয়েটারও এই শীতে বেশ দেখা যাবে। শীতের পোশাকে কাটের বৈচিত্র্যের কথাই জানালেন প্রাইড গ্রুপ রিটেইলের বিপণন ও যোগাযোগ বিভাগের ব্যবস্থাপক সুম্বল মোমেন। তাঁদের ব্র্যান্ডের অধীনে আরবান ট্রুথ ফ্যাশন হাউসে পাওয়া যাচ্ছে শীতের পোশাকের নতুন সংগ্রহ। ‘শীতে তো লেয়ারিং খুব চলে (একটির ওপর আরেকটি এভাবে দুই-তিন রকম পোশাক পরা। যেমন টপের ওপর সোয়েটার)। ভিসকোস কাপড়ে নানা কাটের টপ এনেছি আমরা। এর ওপর পরবার জন্য থাকছে ব্লেজার, কার্ডিগান।’ বললেন সুম্বল মোমেন। 
গত বছরের সঙ্গে এবার শীতের পোশাকের ট্রেন্ডে বড় পার্থক্য হল রং। উজ্জ্বল রং, ক্লালার ব্লকিং, চড়া প্রিন্ট এসব এ বছর তেমন চলছে না। রঙের বেলায় বেশ সংযত ভাবটাই এ বছর দেখা যাবে। ‘নিউট্রাল রং’ যেমন: কালো, ছাই, ধূসর, বাদামি ইত্যাদির দাপট এবার। তবে রঙের বৈচিত্র্যে মেতে উঠতে বাধা নেই। কারণ সেই লেয়ারিং। বাদামি ব্লেজারের সঙ্গে পরে নিন গাঢ় সবুজ বা সাদা-কালো স্ট্রাইপের জাম্পস্যুট। কিংবা ছাই কোটের তলায় থাক লাল বা বেগুনি টি-শার্ট। 
এ মাসের শেষ নাগাদ বেশির ভাগ ফ্যাশন হাউসেই চলে আসবে শীতের পোশাকের নতুন সংগ্রহ। একস্ট্যাসি, আরবান ট্রুথ, ক্যাটস আই, ওয়েস্টেকস, ইয়েলো তো আছেই। অপেক্ষাকৃত নতুন ব্র্যান্ড যেমন: রেলুসে, নয়ের, সিকোসোর সংগ্রহও বেশ আকর্ষণীয়। ঢাকার বনানী ১১ নম্বর সড়ক ও বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের িনচতলা ও দোতলার দোকানগুলোতেও পাবেন শীতের পোশাক। আর এর মধ্যেই জমে উঠতে শুরু করেছে বদরুদ্দোজা সুপার মার্কেট ও বঙ্গবাজার।

বাহাদুর


বাহাদুরটা বড্ড বাহাদুর। দেমাগে যেন মাটিতে পা পড়ে না। সারাক্ষণ মার সঙ্গে সঙ্গে থাকে। মা কোলে না নিলে সে কী কান্না! গা জ্বলে যায় আমার। মার কোলজুড়ে বসে থাকে। আমি কাছে ঘেঁষলেই বড় বড় নখ দিয়ে দেয় খামচি। মার কোলে উঠতে না পেরে সেদিন তো কেঁদেই ফেলেছিলাম। রাগে চোখ দুটো লাল টসটসে হয়ে গিয়েছিল। বললাম, ‘বাড়িতে ও থাকবে, না হয় আমি থাকব।’ মা মাথায় হাত দিয়ে বললেন, ‘কিছু বুঝে না বাবা, ওর ওপর রাগ করিসনে।’ মার ওকালতি দেখে নিজেকে কাঠগড়ার আসামি মনে হচ্ছিল।
ভুলটা আমারই। গ্যারেজের এক কোণে পড়ে ছিল বাহাদুর। স্কুল থেকে ফিরছিলাম। সঙ্গে মা। ব্যাগটা মার হাতে দিয়ে দৌড়ে ওর কাছে গেলাম। আলতো করে গায়ে হাত বুলাতেই মাথা তুলে এমন করুণভাবে চেয়ে রইল, দরদে আমার বুক ফেটে গেল। মাকে বললাম ওকে বািড় নিয়ে যাব। মা নাক সিটকে বললেন, ‘ঝামেলা করিসনে তো।’ অনেক কষ্টে মাকে রাজি করালাম। বাসায় এনে নিজ হাতে যত্ন করলাম। আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠল। তখন থেকেই মা-বাবার সঙ্গে ভাব জমাল। বাবা ওর বাহাদুারি ভাবসাব দেখে নাম রাখলেন বাহাদুর। সাদা লোমে ঢাকা সেই বিড়ালছানাটির কথাই এতক্ষণ বলছিলাম। ও এখন আমার শত্রু, প্রতিদ্বন্দ্বী, প্রতিপক্ষ। আজকাল নতুন ঢং শুরু হয়েছে। প্রতিদিন দুপুরে আমার বিছানায় আরামে ঘুমিয়ে থাকে। বিছানায় একটু গা এলাতে গেলে, চোখ দুটো আধো খুলে গা-মোড়া দিয়ে খ্যাক খ্যাক করে ওঠে। মিউ...মিউ...’ মাকে নাালিশ দিয়েও কোনো লাভ হয় না। উল্টো মা বিরক্ত হয়ে আমাকে ঝাড়ি দিয়ে বলেন, ‘বাহাদুরকে জ্বালাসনে। সোফায় গিয়ে ঘুমা।’ রাগে গরগর করতে করতে সোফায় গিয়ে শোয়া এখন আমার প্রতি দুপুরের রুটিন।
না, এভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না। একটা কিছু করতে হবে। শেষমেশ বন্ধু নাফিকে নিয়ে একটা বুদ্ধি আঁটলাম। বাহাদুরকে বশ করে বাসা থেকে বের করে আনতে পারলেই হলো। ব্যস! বস্তায় ভরে দূরে কোথাও ছেড়ে দিয়ে আসব। আগামী সপ্তাহের কোনো একদিন এই কাজটি করব আমরা।
সেদিনই দুপুরে বৃষ্টিতে ভিজে স্কুল থেকে বািড় ফিরলাম। রাতে গা কাঁপিয়ে জ্বর এল। এরপর কিছুই বলতে পারব না। শুধু এতটুকুই মনে আছে, বাহাদুর আমার বিছানার পাশে সারাক্ষণ মন খারাপ করে বসে ছিল। কখনো আবার তুলতুলে লোমশ গাটা আমার গায়ের সঙ্গে লাগিয়ে শুয়ে থাকত। বড্ড আরাম পেতাম তখন। টানা পাঁচ দিন জ্বরে ভুগলাম। সেরে ওঠার দুদিন পর বিকেলে মার কোলে মাথা রেখে শুয়েছিলাম। বাহাদুর আমার পা জড়িয়ে বসে ছিল। মা মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, ‘বাহাদুর যা করল এ কয় দিন...খাওনা নেই দাওয়া নেই সারাক্ষণ তোর সঙ্গে। যে কয়দিন তুই অসুস্থ ছিলি, সে একফোঁটা পানিও মুখে দেয়নি। ও তোকে খুব ভালোবাসে রে’ বাহাদুরের দিকে আপরাধের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। ও যেন বুঝতে পারল। আহ্লাদি সুরে ডেকে উঠল ‘মিউ...মিউ...’।
তখনই ফোনটা বেজে উঠল। নাফির ফোন, ‘দোস্ত সব ঠিক করে ফেলেছি। চটের একটা বস্তা কিনেছি। নাইলনের শক্ত রশি। কোনোমতে বস্তায় ভরে দুজনে চলে যাব রেলস্টেশনে...’ আর শুনতে পারছিলাম না। চোখ টলমল করছিল। গলা এমন ধরে এল, কথাও বলতে পারছিলাম না। অনেক কষ্টে বিড়বিড় করে বললাম, ‘কোথাও যাবে না বাহাদুর। কোত্থাও না...!’

চোখে চোখে

তোমার দুই চোখের আইলাইনার যেন কখনো একই রকম না হয়।’ সাজতে যাঁরা পছন্দ করেন, তাঁরাই জানেন সাজের বেলায় এর চেয়ে বড় অভিশাপ আর হয় না। বাঁ চোখের লাইনার এক রকম তো ডান চোখের আরেক রকম। খুব সাবধানে লাইনার টেনেও যেন মেলানো যায় না। এখন যে আবার ফিরে এসেছে ক্যাট আই বা টানা লাইনার দেওয়া সাজের চল, তাতে কি বিপদেই পড়েছেন কেউ কেউ? জেনে নিন রূপবিশেষজ্ঞদের পরামর্শ।
রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন বলেন, ক্যাট আইলাইনার করলে বা টেনে কাজল এবং আইলাইনার দিলে চোখটাকে বড় দেখায়। সাজগোজে চোখ যেহেতু বিশেষ প্রাধান্য পেয়ে থাকে এবং ডাগর চোখের আবেদন সব সময় বেশি, তাই ক্যাট আইলাইনারের মাধ্যমে খুব সহজেই চোখটাকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে ফেলা যায়। তবে পোশাক ও পরিবেশের কথা মাথায় রেখেই তা করতে হবে।

আফরোজার মতে, ক্লাসে বা অফিসে গেলে চোখের কোনায় অল্প একটু টেনে লাইনার দিতে পারেন। আইলাইনারের রেখা খুব বেশি ওপরে না উঠিয়ে হালকা টেনে দিলেই এ সময় ভালো দেখাবে। তবে কোন দাওয়াতে লম্বা কামিজ অথবা শাড়ির সঙ্গে বেশ টেনে দিলেও খারাপ লাগবে না। তখন চোখের এক কোনায়; নাকের কাছে সামান্য নামিয়ে লাইনার দিয়ে অন্য প্রান্তে লাইনার উঠিয়েও দিতে পারেন। এভাবে চোখের পাতা ও নিচের অংশে লাইনারটা দুই কোনা থেকেই যুক্ত করে দিতে হবে। লাইনার মোটা রাখবেন না সরু, লাইনারের শেষ প্রান্ত কতটুকু লম্বা রাখবেন—এসব নির্ভর করবে চোখের আকৃতি ও মুখের গড়নের ওপর। ছোট চোখে মোটা করে লাইনার দিলে ভালো লাগে, নিচের অংশে তখন সাদা কাজলও ব্যবহার করা যেতে পারে। বড় চোখে বেশি মোটা করে দিতে গেলে হয়তো চোখ আরও বেশি বড় দেখাতে পারে। পশ্চিমা ধাঁচের পোশাকের সঙ্গে চোখের পাতায় কোনার অংশে ওপরে টেনে লাইনার দিন। এরপর নিচে পুরো চোখে কাজল না দিয়ে মাঝখান থেকে শুরু করে শেষ প্রান্ত পর্যন্ত কাজল পরলে মানাবে। চাইলে পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে সোনালি বা রুপালি রঙের আইশ্যাডো চোখের কোনায় লাগানো যেতে পারে, জানালেন আফরোজা। 
কথা হলো মেক–আপ শিল্পী জাহিদ খানের সঙ্গে। তাঁর মতে, ষাটের দশকে চোখের সাজের সঙ্গে এখনকার সাজের পার্থক্য হলো, আগে চোখের পাতায় কেবল কাজলের রেখা নানাভাবে টানা হতো। এখন এর সঙ্গে চোখের নিচেও নানাভাবে কাজল ও আইশ্যাডো ব্যবহার করে সাজে ভিন্নতা আনা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ঘরোয়া পরিবেশ বা কর্মক্ষেত্রে খুব সাধারণ সাজই মানানসই। তাই এ সময় ডাবল লাইনিং অর্থাৎ চোখের ওপরে ও নিচের পাতায় লাইনার না টানাই ভালো। চোখের ওপরের পাতায় শুধু সামান্য টেনে কাজল বা আইলাইনার লাগাতে পারেন। এরপর চাইলে নু্যড, বাদামি এ ধরনের স্বাভাবিক রঙের আইশ্যাডো ব্যবহার করতে পারেন। ভারী মেক–আপ নিলে ডাবল লাইনিং করে চোখে গাঢ় রঙের আইশ্যাডোও ব্যবহার করতে পারেন। ভালো লাগবে স্মোকি আই মেকআপও। তবে তখন ঠোঁটে ব্যাবহার করতে হবে হালকা রঙের লিপস্টিক। বেশ সাজতে ভালোবাসেন যাঁরা তাঁরা বারবি পুতুল স্টাইলেও চোখের মেকআপ করতে পারেন। চোখের এই সাজে চোখের নিচে সাদা ও কালো কাজল লাগানো যেতে পারে। শুধু চোখের নিচের পাতার কোনায় মোটা করে লাইনার বা কাজল লাগালেও ভালো দেখাবে। পোশাকে পশ্চিমা ও দেশি দুইয়ের মিশেল থাকলে একটু বেশি টেনে চোখ আঁকলেও মন্দ লাগবে না, জানালেন জাহিদ খান।

কিছু পরামর্শ
 ক্যাট আইলাইনারের ক্ষেত্রে ম্যাট এবং ওয়াটার প্রুফ লাইনার ও কাজল ব্যবহার করতে হবে। তাতে ছড়িয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
 ভারী মেকআপ নিলে ফলস আই ল্যাশ পরলে চোখের সাজ আরও সুন্দর ফুটে উঠবে। অন্যান্য সময় ঘন করে মাশকারা লাগালেই চলবে।
 চাইলে ধূসর রঙের লেন্সও পরা যেতে পারে।