বাহাদুরটা বড্ড বাহাদুর। দেমাগে যেন মাটিতে পা পড়ে না। সারাক্ষণ মার সঙ্গে সঙ্গে থাকে। মা কোলে না নিলে সে কী কান্না! গা জ্বলে যায় আমার। মার কোলজুড়ে বসে থাকে। আমি কাছে ঘেঁষলেই বড় বড় নখ দিয়ে দেয় খামচি। মার কোলে উঠতে না পেরে সেদিন তো কেঁদেই ফেলেছিলাম। রাগে চোখ দুটো লাল টসটসে হয়ে গিয়েছিল। বললাম, ‘বাড়িতে ও থাকবে, না হয় আমি থাকব।’ মা মাথায় হাত দিয়ে বললেন, ‘কিছু বুঝে না বাবা, ওর ওপর রাগ করিসনে।’ মার ওকালতি দেখে নিজেকে কাঠগড়ার আসামি মনে হচ্ছিল।
ভুলটা আমারই। গ্যারেজের এক কোণে পড়ে ছিল বাহাদুর। স্কুল থেকে ফিরছিলাম। সঙ্গে মা। ব্যাগটা মার হাতে দিয়ে দৌড়ে ওর কাছে গেলাম। আলতো করে গায়ে হাত বুলাতেই মাথা তুলে এমন করুণভাবে চেয়ে রইল, দরদে আমার বুক ফেটে গেল। মাকে বললাম ওকে বািড় নিয়ে যাব। মা নাক সিটকে বললেন, ‘ঝামেলা করিসনে তো।’ অনেক কষ্টে মাকে রাজি করালাম। বাসায় এনে নিজ হাতে যত্ন করলাম। আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠল। তখন থেকেই মা-বাবার সঙ্গে ভাব জমাল। বাবা ওর বাহাদুারি ভাবসাব দেখে নাম রাখলেন বাহাদুর। সাদা লোমে ঢাকা সেই বিড়ালছানাটির কথাই এতক্ষণ বলছিলাম। ও এখন আমার শত্রু, প্রতিদ্বন্দ্বী, প্রতিপক্ষ। আজকাল নতুন ঢং শুরু হয়েছে। প্রতিদিন দুপুরে আমার বিছানায় আরামে ঘুমিয়ে থাকে। বিছানায় একটু গা এলাতে গেলে, চোখ দুটো আধো খুলে গা-মোড়া দিয়ে খ্যাক খ্যাক করে ওঠে। মিউ...মিউ...’ মাকে নাালিশ দিয়েও কোনো লাভ হয় না। উল্টো মা বিরক্ত হয়ে আমাকে ঝাড়ি দিয়ে বলেন, ‘বাহাদুরকে জ্বালাসনে। সোফায় গিয়ে ঘুমা।’ রাগে গরগর করতে করতে সোফায় গিয়ে শোয়া এখন আমার প্রতি দুপুরের রুটিন।
না, এভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না। একটা কিছু করতে হবে। শেষমেশ বন্ধু নাফিকে নিয়ে একটা বুদ্ধি আঁটলাম। বাহাদুরকে বশ করে বাসা থেকে বের করে আনতে পারলেই হলো। ব্যস! বস্তায় ভরে দূরে কোথাও ছেড়ে দিয়ে আসব। আগামী সপ্তাহের কোনো একদিন এই কাজটি করব আমরা।
সেদিনই দুপুরে বৃষ্টিতে ভিজে স্কুল থেকে বািড় ফিরলাম। রাতে গা কাঁপিয়ে জ্বর এল। এরপর কিছুই বলতে পারব না। শুধু এতটুকুই মনে আছে, বাহাদুর আমার বিছানার পাশে সারাক্ষণ মন খারাপ করে বসে ছিল। কখনো আবার তুলতুলে লোমশ গাটা আমার গায়ের সঙ্গে লাগিয়ে শুয়ে থাকত। বড্ড আরাম পেতাম তখন। টানা পাঁচ দিন জ্বরে ভুগলাম। সেরে ওঠার দুদিন পর বিকেলে মার কোলে মাথা রেখে শুয়েছিলাম। বাহাদুর আমার পা জড়িয়ে বসে ছিল। মা মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, ‘বাহাদুর যা করল এ কয় দিন...খাওনা নেই দাওয়া নেই সারাক্ষণ তোর সঙ্গে। যে কয়দিন তুই অসুস্থ ছিলি, সে একফোঁটা পানিও মুখে দেয়নি। ও তোকে খুব ভালোবাসে রে’ বাহাদুরের দিকে আপরাধের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। ও যেন বুঝতে পারল। আহ্লাদি সুরে ডেকে উঠল ‘মিউ...মিউ...’।
তখনই ফোনটা বেজে উঠল। নাফির ফোন, ‘দোস্ত সব ঠিক করে ফেলেছি। চটের একটা বস্তা কিনেছি। নাইলনের শক্ত রশি। কোনোমতে বস্তায় ভরে দুজনে চলে যাব রেলস্টেশনে...’ আর শুনতে পারছিলাম না। চোখ টলমল করছিল। গলা এমন ধরে এল, কথাও বলতে পারছিলাম না। অনেক কষ্টে বিড়বিড় করে বললাম, ‘কোথাও যাবে না বাহাদুর। কোত্থাও না...!’
ভুলটা আমারই। গ্যারেজের এক কোণে পড়ে ছিল বাহাদুর। স্কুল থেকে ফিরছিলাম। সঙ্গে মা। ব্যাগটা মার হাতে দিয়ে দৌড়ে ওর কাছে গেলাম। আলতো করে গায়ে হাত বুলাতেই মাথা তুলে এমন করুণভাবে চেয়ে রইল, দরদে আমার বুক ফেটে গেল। মাকে বললাম ওকে বািড় নিয়ে যাব। মা নাক সিটকে বললেন, ‘ঝামেলা করিসনে তো।’ অনেক কষ্টে মাকে রাজি করালাম। বাসায় এনে নিজ হাতে যত্ন করলাম। আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠল। তখন থেকেই মা-বাবার সঙ্গে ভাব জমাল। বাবা ওর বাহাদুারি ভাবসাব দেখে নাম রাখলেন বাহাদুর। সাদা লোমে ঢাকা সেই বিড়ালছানাটির কথাই এতক্ষণ বলছিলাম। ও এখন আমার শত্রু, প্রতিদ্বন্দ্বী, প্রতিপক্ষ। আজকাল নতুন ঢং শুরু হয়েছে। প্রতিদিন দুপুরে আমার বিছানায় আরামে ঘুমিয়ে থাকে। বিছানায় একটু গা এলাতে গেলে, চোখ দুটো আধো খুলে গা-মোড়া দিয়ে খ্যাক খ্যাক করে ওঠে। মিউ...মিউ...’ মাকে নাালিশ দিয়েও কোনো লাভ হয় না। উল্টো মা বিরক্ত হয়ে আমাকে ঝাড়ি দিয়ে বলেন, ‘বাহাদুরকে জ্বালাসনে। সোফায় গিয়ে ঘুমা।’ রাগে গরগর করতে করতে সোফায় গিয়ে শোয়া এখন আমার প্রতি দুপুরের রুটিন।
না, এভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না। একটা কিছু করতে হবে। শেষমেশ বন্ধু নাফিকে নিয়ে একটা বুদ্ধি আঁটলাম। বাহাদুরকে বশ করে বাসা থেকে বের করে আনতে পারলেই হলো। ব্যস! বস্তায় ভরে দূরে কোথাও ছেড়ে দিয়ে আসব। আগামী সপ্তাহের কোনো একদিন এই কাজটি করব আমরা।
সেদিনই দুপুরে বৃষ্টিতে ভিজে স্কুল থেকে বািড় ফিরলাম। রাতে গা কাঁপিয়ে জ্বর এল। এরপর কিছুই বলতে পারব না। শুধু এতটুকুই মনে আছে, বাহাদুর আমার বিছানার পাশে সারাক্ষণ মন খারাপ করে বসে ছিল। কখনো আবার তুলতুলে লোমশ গাটা আমার গায়ের সঙ্গে লাগিয়ে শুয়ে থাকত। বড্ড আরাম পেতাম তখন। টানা পাঁচ দিন জ্বরে ভুগলাম। সেরে ওঠার দুদিন পর বিকেলে মার কোলে মাথা রেখে শুয়েছিলাম। বাহাদুর আমার পা জড়িয়ে বসে ছিল। মা মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, ‘বাহাদুর যা করল এ কয় দিন...খাওনা নেই দাওয়া নেই সারাক্ষণ তোর সঙ্গে। যে কয়দিন তুই অসুস্থ ছিলি, সে একফোঁটা পানিও মুখে দেয়নি। ও তোকে খুব ভালোবাসে রে’ বাহাদুরের দিকে আপরাধের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। ও যেন বুঝতে পারল। আহ্লাদি সুরে ডেকে উঠল ‘মিউ...মিউ...’।
তখনই ফোনটা বেজে উঠল। নাফির ফোন, ‘দোস্ত সব ঠিক করে ফেলেছি। চটের একটা বস্তা কিনেছি। নাইলনের শক্ত রশি। কোনোমতে বস্তায় ভরে দুজনে চলে যাব রেলস্টেশনে...’ আর শুনতে পারছিলাম না। চোখ টলমল করছিল। গলা এমন ধরে এল, কথাও বলতে পারছিলাম না। অনেক কষ্টে বিড়বিড় করে বললাম, ‘কোথাও যাবে না বাহাদুর। কোত্থাও না...!’
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন